বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি ঃ   ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে শর্টগানসহ ডা. গোলাম কবির নামের এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করেছে স্থানীয় থানা পুলিশ।
তিনি ফরিদপুর জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সাবেক সদস্য। তার বিরুদ্ধে জনসম্মুখে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন ও
ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। তিনি ফরিদপুর-১ আসন (বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা) থেকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের
মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বোয়ালমারী পৌরসদরের চৌরাস্তা সংলগ্ন খান প্লাজায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা সদরের চৌরাস্তা সংলগ্ন খান প্লাজার ৪র্থ তলা ভাড়া নিয়ে ‘ডা. গোলাম কবির নার্সিং ইনস্টিটিউট’
নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন। খান প্লাজার স্বর্ত্ত্বাধিকারী সালমা বেগমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ওই ভবনের ৪র্থ তলা ভাড়া নিয়ে ঝাঁমেলা চলছে তার। এ নিয়ে
ভাড়াটিয়া ডা. গোলাম কবির ও ভবনের মালিক একে-অপরের মধ্যে প্রায় ৮ মাস ধরে ৮-৯টি মামলাও চলছে বলে জানা গেছে। ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে ডা.
গোলাম কবির ঢাকা থেকে একটি লাইন্সেসকৃত শর্টগান কিনে এনে তার নার্সিং ইনস্টিটিউটের ৪র্থ তলায়

ওঠেনসেখানথেকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে
যাওয়ার উদ্দ্যেশে শর্টগানসহ কাগজপত্র নিয়ে খান প্লাজার ৪র্থ তলা থেকে নামার সময় ভবন মালিক সালমা বেগম ও তার মেয়ে জন্নাতুল ফেরদৌস নিপার সাথে
বাগবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে ডা. গোলাম কবির শর্টগানটি নিয়ে নিচতলায় নামলে সালমা বেগম ও তার মেয়ের সাথে ঝাঁপ্টাঝাপ্টি হয়। পরে স্থানীয়
লোকজন, পুলিশ প্রশাসন এসে পরিস্থিতি শান্ত করে ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ মুক্তিযোদ্ধা ডা. গোলাম কবিরকে থানায় নিয়ে যায়।
খান প্লাজার নিচতলার ব্যাবসায়ী মিজান চৌধুরী বলেন, গোলাম কবির ও সালমার সাথে ঝাপ্টাঝাপ্টি হচ্ছে দেখতে পাই। পরে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি
শান্ত করে।
খান প্লাজার স্বর্ত্ত্বাধিকারী সালমা বেগম বলেন, ডা. গোলাম কবির কোনো প্রকার চুক্তি ছাড়াই আমার একটি ফ্লাট নার্সিং ইনস্টিটিউট কলেজ করে দখল করে রেখেছেন।
ঠিকমত ভাড়া দেন না। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি ভবনে এলে তার কাছে ভাড়া চাইলে তিনি আমার ও আমার মেয়ের ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং ব্যাগ থেকে শর্টগান বের
করে আমাদেরকে গুলি করতে যান। আমার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। আমি তার শাস্তি দাবি করি।
এ বিষয়ে গোলাম কবির নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. গোলাম কবির বলেন, ঘটনাটি সব মিথ্যা কথা। আমি নতুন একটি শর্টগান কিনেছি আমার
নিরাপত্তার জন্য। আমার কলেজ প্রতিষ্ঠানের ৪তলা থেকে লাইসেন্সের কাগজপত্রসহ শর্টগানটি নিয়ে ফরিদপুর ডিসি অফিসে নিচতলায় নামলে বিল্ডিংয়ের মালিক সালমা
বেগম ও তার মেয়ে নিপা আমার ওপর জোরজবরদস্তি করে অস্ত্রটি কেড়ে নিতে চায়। তখন তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা কৃষক লীগের সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, কৃষক লীগের বর্তমান জেলা কমিটির সঙ্গে ডা. গোলাম কবিরের কোনো সম্পর্ক নেই।
তাকে এর আগেও ভুয়া পরিচয় দেওয়া ও কৃষক লীগের নাম ভাঙাতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি তা শোনেন না। তার ব্যক্তিগত কর্মকা-ের দ্বায়ভার কৃষক লীগ
বহন করবে না।
শর্টগানটি জব্দকারী বোয়ালমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম সুমন বলেন, একটি কালো ব্যাগের মধ্যে শর্টগানসহ ডা. গোলাম কবিরকে থানায় আনা
হয়েছে। তিনি নতুন লাইসেন্স করেছেন। আজকে তার ডিসি অফিসে যাওয়ার কথা ছিল। বিল্ডিং মালিকের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে অস্ত্রসহ তাকে
থানায় আনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, আটক নয়, অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। ডা. গোলাম কবিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।
তবে এভাবে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে অস্ত্র প্রদশর্ন ও ভয়ভীতি দেখানো আইনগত অপরাধ। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।